ঢাকা ০৮:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বক্তব্য ভাইরাল হওয়া সেই পুলিশ কর্মকর্তাকে সিলেটে বদলি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৩৭:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২১
  • ১২১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখা কুমিল্লার দাউদকান্দি-চান্দিনা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জুয়েল রানাকে সিলেটে বদলি করা হয়েছে। সম্প্রতি নানা ইস্যু নিয়ে তার বক্তব্য সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

গত রোববার এক প্রজ্ঞাপনে সপ্তম এপিবিএন সিলেটের সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি করা হয়। ১০ মাস আগে তিনি কুমিল্লায় যোগদান করেছিলেন। মাত্র কয়েক মাসে তার নানাবিধ কর্মকাণ্ড মানুষের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে।সম্প্রতি চৌদ্দগ্রামে ইউপি নির্বাচনে ভোট ইস্যুতে একটি বক্তব্য ভাইরাল হয়।

সেখানে জুয়েল রানা বলেন, ‘আপনি নৌকা প্রাপ্তি হয়েছেন বলেই চেয়ারম্যান হয়ে যাবেন বিষয়টি এমন না। আমি যেখানে ডিউটি করেছি নৌকা পেয়েছে ২৫১ ভোট। কিন্তু নৌকার প্রার্থী বলতে পারেননি ভোট সুষ্ঠুু হয়নি। শুধু নৌকা নিয়ে আসলেই, টাকাপয়সা থাকলেই, বড় বড় নেতার আত্মীয়স্বজন হলে নির্বাচনে জয় লাভ করা যাবে না।’তিনি আরও বলেন, ‘ভোটকেন্দ্র অনেকে দখল করতে আসেন, চোর ধর্মের কথা শুনে নাকুত্তার লেজ সোজা হয় না। আমাদের অস্ত্র রেডি আছে, প্রশিক্ষণ আছে, সরকার গুলি দিছে।

অর্ডার আছে। আইন লঙ্ঘন হচ্ছে। আমরা কি বসে থেকে ফিডার খাব? গুলি করব, হাত-পা যদি দু-চারজনের ওড়ে যায়, আমাদের কারও কাছে জবাবদিহি করতে হবে না।’এই পুলিশ কর্মকর্তার প্রায় ১২ মিনিটের ভিডিওতে তিনি নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য সতর্কতামূলক দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে প্রার্থী ও সাধারণ মানুষ তার বক্তব্য সমর্থন দিয়েছেন।সাধারণ মানুষের ধারণা এই বক্তব্যের কারণে তাকে বদলি করা হয়েছে।এএসপি জুয়েল রানা কুমিল্লায় যোগদানের ১০ মাসের মধ্যে নানা কর্মকাণ্ডের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম ছিল গোমতী নদীতে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসবাদ, ডাকাতি বন্ধ করে নিরাপদ নৌপথ ঘোষণা করা। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে অসহায় প্রতিবন্ধী মানুষের পাশে দাঁড়াতেন তিনি।

ইভটিজিং ও মহাসড়কে ডাকাতি রোধে এএসপি জুয়েল রানার প্রশংসনীয় ভূমিকা ছিল।এছাড়া মেঘনা উপজেলার একটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে সংঘর্ষ চলাকালীন তাকে ড্রোন ব্যবহার করে অপরাধীদের শনাক্ত করতে দেখা যায়। সম্প্রতি চান্দিনায় বেতন ভাতার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করেছিল শ্রমিকরা। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যখন অবরোধ সরাতে হিমশিম খাচ্ছিল। তখন এএসপি জুয়েল রানার বক্তব্য শুনে আশ্বাস পেয়ে শ্রমিকরা রাস্তা ছেড়ে দেয়।এই পুলিশ কর্মকর্তার বদলির খবরে হাবিবুর রহমান ফেসবুকে কমেন্টে বলেন, আমরা আপনার জন্য দোয়া করব সব সময়। আপনার সততার পুরস্কার দুনিয়ায় না পেলেও আখেরাতে পাবেন ইনশাআল্লাহ।বদলি ও ভাইরাল ভিডিও প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে এএসপি জুয়েল রানা বলেন, ‘আমি আর কোনো নিউজ চাচ্ছি না।

আমি কিছুই বলতে চাই না, এমনিতেই খুব বিপদের মধ্যে আছি।’আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য চেষ্টা করেছি। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য যা যা প্রয়োজন তা করেছি। প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছেন। উন্নত দেশের প্রধান শর্ত হচ্ছে সে সমাজে ন্যায়বিচার আছে কি না। আপনি যদি ডাকাতি, চুরি, খুনের, মাদকের, ইভটিজিংয়ের আতঙ্কে থাকেন। তাহলে শতকোটি টাকা থাকলে শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন না।

তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু হানাহানি, কাটাকাটি ও সামাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার দাবি তুলেছিলেন। সেটাই আমরা ১০ মাসে কুমিল্লাতে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছি। সেটার মূল্যায়ন স্থানীয় বাসিন্দারা করবে। আমি চেষ্টা করেছি ডিজিটালাইজেশের মাধ্যমে প্রযুক্তি ব্যবহার করে কীভাবে ক্রাইম কন্ট্রোল করা যায়।

উল্লেখ্য, ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ পুলিশের ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশ পুলিশে চালু হওয়া অভিন্ন মানদণ্ডের ভিত্তিতে অর্জন করেছেন শ্রেষ্ঠ সার্কেল এএসপির পুরস্কার। শ্রেষ্ঠ জনবান্ধব কর্মকর্তা নির্বাচিত হয়েছিলেন এএসপি জুয়েল রানা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বক্তব্য ভাইরাল হওয়া সেই পুলিশ কর্মকর্তাকে সিলেটে বদলি

আপডেট টাইম : ০৭:৩৭:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখা কুমিল্লার দাউদকান্দি-চান্দিনা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জুয়েল রানাকে সিলেটে বদলি করা হয়েছে। সম্প্রতি নানা ইস্যু নিয়ে তার বক্তব্য সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

গত রোববার এক প্রজ্ঞাপনে সপ্তম এপিবিএন সিলেটের সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি করা হয়। ১০ মাস আগে তিনি কুমিল্লায় যোগদান করেছিলেন। মাত্র কয়েক মাসে তার নানাবিধ কর্মকাণ্ড মানুষের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে।সম্প্রতি চৌদ্দগ্রামে ইউপি নির্বাচনে ভোট ইস্যুতে একটি বক্তব্য ভাইরাল হয়।

সেখানে জুয়েল রানা বলেন, ‘আপনি নৌকা প্রাপ্তি হয়েছেন বলেই চেয়ারম্যান হয়ে যাবেন বিষয়টি এমন না। আমি যেখানে ডিউটি করেছি নৌকা পেয়েছে ২৫১ ভোট। কিন্তু নৌকার প্রার্থী বলতে পারেননি ভোট সুষ্ঠুু হয়নি। শুধু নৌকা নিয়ে আসলেই, টাকাপয়সা থাকলেই, বড় বড় নেতার আত্মীয়স্বজন হলে নির্বাচনে জয় লাভ করা যাবে না।’তিনি আরও বলেন, ‘ভোটকেন্দ্র অনেকে দখল করতে আসেন, চোর ধর্মের কথা শুনে নাকুত্তার লেজ সোজা হয় না। আমাদের অস্ত্র রেডি আছে, প্রশিক্ষণ আছে, সরকার গুলি দিছে।

অর্ডার আছে। আইন লঙ্ঘন হচ্ছে। আমরা কি বসে থেকে ফিডার খাব? গুলি করব, হাত-পা যদি দু-চারজনের ওড়ে যায়, আমাদের কারও কাছে জবাবদিহি করতে হবে না।’এই পুলিশ কর্মকর্তার প্রায় ১২ মিনিটের ভিডিওতে তিনি নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য সতর্কতামূলক দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে প্রার্থী ও সাধারণ মানুষ তার বক্তব্য সমর্থন দিয়েছেন।সাধারণ মানুষের ধারণা এই বক্তব্যের কারণে তাকে বদলি করা হয়েছে।এএসপি জুয়েল রানা কুমিল্লায় যোগদানের ১০ মাসের মধ্যে নানা কর্মকাণ্ডের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম ছিল গোমতী নদীতে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসবাদ, ডাকাতি বন্ধ করে নিরাপদ নৌপথ ঘোষণা করা। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে অসহায় প্রতিবন্ধী মানুষের পাশে দাঁড়াতেন তিনি।

ইভটিজিং ও মহাসড়কে ডাকাতি রোধে এএসপি জুয়েল রানার প্রশংসনীয় ভূমিকা ছিল।এছাড়া মেঘনা উপজেলার একটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে সংঘর্ষ চলাকালীন তাকে ড্রোন ব্যবহার করে অপরাধীদের শনাক্ত করতে দেখা যায়। সম্প্রতি চান্দিনায় বেতন ভাতার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করেছিল শ্রমিকরা। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যখন অবরোধ সরাতে হিমশিম খাচ্ছিল। তখন এএসপি জুয়েল রানার বক্তব্য শুনে আশ্বাস পেয়ে শ্রমিকরা রাস্তা ছেড়ে দেয়।এই পুলিশ কর্মকর্তার বদলির খবরে হাবিবুর রহমান ফেসবুকে কমেন্টে বলেন, আমরা আপনার জন্য দোয়া করব সব সময়। আপনার সততার পুরস্কার দুনিয়ায় না পেলেও আখেরাতে পাবেন ইনশাআল্লাহ।বদলি ও ভাইরাল ভিডিও প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে এএসপি জুয়েল রানা বলেন, ‘আমি আর কোনো নিউজ চাচ্ছি না।

আমি কিছুই বলতে চাই না, এমনিতেই খুব বিপদের মধ্যে আছি।’আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য চেষ্টা করেছি। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য যা যা প্রয়োজন তা করেছি। প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছেন। উন্নত দেশের প্রধান শর্ত হচ্ছে সে সমাজে ন্যায়বিচার আছে কি না। আপনি যদি ডাকাতি, চুরি, খুনের, মাদকের, ইভটিজিংয়ের আতঙ্কে থাকেন। তাহলে শতকোটি টাকা থাকলে শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন না।

তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু হানাহানি, কাটাকাটি ও সামাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার দাবি তুলেছিলেন। সেটাই আমরা ১০ মাসে কুমিল্লাতে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছি। সেটার মূল্যায়ন স্থানীয় বাসিন্দারা করবে। আমি চেষ্টা করেছি ডিজিটালাইজেশের মাধ্যমে প্রযুক্তি ব্যবহার করে কীভাবে ক্রাইম কন্ট্রোল করা যায়।

উল্লেখ্য, ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ পুলিশের ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশ পুলিশে চালু হওয়া অভিন্ন মানদণ্ডের ভিত্তিতে অর্জন করেছেন শ্রেষ্ঠ সার্কেল এএসপির পুরস্কার। শ্রেষ্ঠ জনবান্ধব কর্মকর্তা নির্বাচিত হয়েছিলেন এএসপি জুয়েল রানা।